★ - হিরো - ★
লিখেছেন লিখেছেন জিহর ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:২৩:০৯ সকাল
লেখা : তালুকদার জহির
.
s.s.c পরিক্ষা পরবর্তীকালিন লম্বা
ছুটিটায় কেউ কেউ ঢাকা দৌড়লো
ভালো কোচিং এর আশায়...
কিন্তু আমরা চার বন্ধু ( মানে আমি,
সোহান, রবি, এবং তন্ময় ) এলাকার
কলেজে ভর্তি হবো। তাই কেউই
টেনশিত ছিলাম না! ফলে গোটা
তিনেক টুর করে, আড্ডা দিয়ে,
সাইকেল নিয়ে ঘোরা ঘুরি করে, দু-
একটা কৃকেট ব্যাডমিন্টন টুনামেন্ট
খেলে ছুটিটা পার করলাম।
এবং বেশ ভালই উপভোগ করলাম
জীবনের প্রথম পাওয়া দীর্ঘতম ছুটি
টা।
ভর্তি পরিক্ষার আগে কয়েকটা দিন
বই পত্র ঘাটলাম, এবং মোটামুটি পাশ
নিয়ে কলেজ লাইফ শুরু..!
বন্ধুদের মধ্যে রবিউল ওরুফে রবি একটু
আলাদা ছিলো।
ছোটবেলা থেকে মাসুদ রানা,
তিন গোয়েন্দা, সত্যজিৎ ওর প্রিয়।
সেই সু'বাদে চশমা পরার অনিচ্ছাকৃত
অভ্যেস ওর হয়ে গেছে। এবং রবি কে
আমরা কানা বলে ডাকতাম এবং
ডাকি।
দেখতে সুন্দর হওয়ায় ওকে মাঝে
মাঝে হিরো বলেও ডাকা হয় পাম
সরূপ। যেটা ওর একেবারেই অপছন্দ।
গল্পের মূল চরিত্র বলে ওকে একটু হাই-
লাইট করতে হলো।
তন্ময় কানজুশ, সোহান ঢিলা, এবং
আমি....(---) বলা নিষেধ। আরে
নিজের খেপা কি কেউ ঢোল
পিটিয়ে বলে নাকি..? পারলে
বুঝে নিয়েন....
.
এবার মূল ঘটনায় আসি...
রবি হঠাৎ একদিন আমাদের চার বন্ধু
সহো আরো দুজনকে (কলেজের নতুন
ফ্রেন্ড শিমুল, আরিফ) মুড়ি-চানাচুর
পার্টির অফার করলো। আমরা
ভাবলাম কলেজে নতুন, তাই মনেহয় এই
আয়োজন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত
হয়ে বুঝলাম যে ব্যাপারটা ভিন্ন....
রবি প্রেম ঘটিত কিছু সমস্যা অনুভব
করছে। মানে একটা মেয়ে রবি'কে
চিরকুট দিয়েছে। যেটায় ১টা ফোন
নাম্বার, এবং টাইম লেখা।
আমরা প্রথমে ইয়ার্কি হিসেবে
নিলেও পরে বুঝলাম যে রবি
সিরিয়াস। নাম্বারটায় দুবার রিং
করে আরিফ নিশ্চিত করলো যে এটা
মেয়ের নাম্বার।
তখন পুর্বাভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিমুল কিছু
টিপ্স দিলো। আমরা যেহেতু এ
ব্যাপারটায় নতুন, তাই সবাই শিমুলের
কথায় সায় দিলাম। এবং সেগুলো
পূজি করে রবি প্রেমের পথে পা
বাড়ালো।
পরদিন রবি আমাদের সাথে নিরা
নামের একটা সিমসাম সুন্দরি
মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
এবং নিরা চলে যাবার পর ওর কাছ
থেকে জোর পূর্বক চটপটি খেলাম
সবাই মিলে।
কিন্তু সপ্তাহ ঘোরার আগেই রবি
ফাঁটা ঠোট নিয়ে আমাদের সামনে
হাজির।
নিরার কাজিন নাকি এই কলেজেই
সেকেন্ড ইয়ারে, এবং তার
বদৌলতে রবির এই হাল। ঠোটের
সাথে চশমার ফ্রেমটাও গেছে....
ওকে রিক্সা করে বাসায় দিয়ে
আসলাম। আমার বা হাতে ছোট্ট ১টা
ব্যান্ডেজ বেধে নিয়েছিলাম।
আন্টিকে বললাম খেলার সময় মারা
মারি হয়েছে। এবং আন্টির কিছু
বকা শুনে শান্ত ছেলের মতো
বাসায় ফিরে এলাম। কিন্তু ভুলে
ব্যান্ডেজ না খোলায় বাসায়
আরেক ধমক বকা জুটলো। শাস্তি স্বরূপ
রাতের খাবার বন্ধ। অবশ্য ফ্রিজ
থেকে ঠান্ডা খাবার
খেয়েছিলাম রাত ২টায় উঠে।
পরদিন রবির জরুরি তলবে আবার
পরামর্শ সভার আয়োজন করা হলো।
আমি, তন্ময়, সোহান এবং আরিফ...
রবি চরম উত্তিজত। মুতরাং আমরা
সবাই পরামর্শ দিলাম ব্রেকাপের।
কিন্তু নিরা পেত্নী রবির ঘাড়ে
ঠিক মতো জেকে বসেছে। নিরার
পাঠানো গোটা কয়েক ব্যাথার
ট্যাবলেট , এবং এক তোড়া ফুল
দেখিয়ে রবি ওর পক্ষে ছাফাই
গাইলো। যেহেতু আমরা সবাই
শান্তি প্রিয় ভদ্র ছেলে।
মারামারি আমাদের কাজ নয়।
তাই প্রেমটা লুকিয়ে চালিয়ে
যাবার বুদ্ধি দিলাম।
.
ফলে রবি এতোটাই লুকালো যে,
আড্ডা, গ্রুপ স্যাডি, সাপ্তাহিক
খেলা সব কিছুতে ওর অনুপস্থিতি
বেড়ে গেলো আশংকা জনক ভাবে।
ফেসবুকেও রবি কে পাওয়া যাচ্ছিল
না। যার কিনা ফেসবুক না
চালালে ঘুমই আসতো না।
কাকে যেন বলতে শুনেছিলাম যে,
প্রেম এবং খুন এমন জিনিস, যা একবার
ঘটে গেলে প্রকাশ পাবেই। লুকানো
অসম্ভব...
.
এভাবেই দিন যাচ্ছিল, এবং ইয়ার
ফাইনাল এক্সাম এগিয়ে আসছিল।
সামনে এক্সাম... তাই সবাই টুকটাক
পড়া গুছিয়ে নিচ্ছিলাম।
হঠাৎ একদিন তন্ময়ের ফোন পেয়ে
শুনলাম যে, রবি হসপিটালে। ও
আমাদের কাছ থেকে লুকালেও
নিরার কাজিন ঠিকই খুজে নিয়ে
আচ্ছা সাইজ লাগিয়েছে। ফলে
রবির এক সপ্তাহ হসপিটাল + এক মাস
বেড রেস্ট।
বিছানা ধরা রবির কাছে এবার
আমাদের কদর ফিরে এলো। মাঝে
মাঝে নিরা পেত্নী ও ওকে
দেখতে আসতো। যেটা রবির ছোট
ভাই রাফি আমাদের
জানিয়েছিল।
নিরার বাসা থেকে ফোন
ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি
হওয়ায়, কলেজ টাইমে আমাদের
ফোন থেকে রবি'র সাথে বকবক
করতো। এবং চার্জের বারটা
বাজাতো।
যদিও আমরা চাচ্ছিলাম যে নিরা
নামের প্যারাটা দুর হোক...
কিন্তু দিনদিন প্যারাটা আরো
বেড়ে যেন টিউমার থেকে
ক্যানসারে রূপ নিল।
.
ওদিকে রত্নগর্ভা রবি'র জননীও
নিরাকে পছন্দ করে। যে কিনা
আমাদের ছায়া পর্যন্ত দেখতে
পারে না।
কাহিনি কি? জানতে আমাদের
বিশ্বস্ত স্পাই রবি'র ছোট ভাই
রাফি'র স্বরণাপন্য হতে হলো।
রাফি'র কথায় এটাই বুঝলাম যে,
নিরা রবি'কে ক্লাসের পড়া
বোঝাবার বাহানায় ওদের বাসায়
আসতো।এভাবেই আন্টির মন জয় করে
নিয়েছে! এবং আমরাও নিরাকে
আস্তে আস্তে সহ্য করে নিলাম।
একমাস বেড রেস্ট শেষে রবি এখন
সাভাবিক।
এবং বছর শেষ হওয়ায় নিরার কাজিন
কলেজ ছেড়ে ভার্সিটিতে। আমরা
সেকেন্ড ইয়ারে।
এসব টুকিটাকি পরিবর্তনের সাথে
সাথে কখন যে রবি আমাদের থেকে
দুরে সরে যাচ্ছিল, টের পাইনি।
নিরা একদিন ফোন করে বললো যে,
রবি খুবই অসুস্থ।
আমি, সোহান, আরিফ ওকে দেখতে
গেলাম।
আন্টি কোনদিন আমাদের বসতে
বলেন নাই। কিন্তু আজ বসতে দিলেন।
এরই মধ্যে নিরা এই পরিরিবারটাকে
এতই আপন করে নিয়েছিল যে, মনে
হলো নিরা এ বাড়িরই কেউ। আন্টি
আমাদের সাথে কথা বলছিলেন।
নিরা কিচেন থেকে নাস্তা এনে
দিলো।
এক পর্যায়ে আন্টি বললেন ; রবি'র
ব্রেন-টিউমার ধরা পড়েছে।
যেটা এখন ওর প্রাণ-নাশের পথে ।
হয়তো বেশিদিন বাচবে না। তাই
যতো দিন আছে আমরা যেন
সাধ্যমতো ওর সঙ্গ দেই। কথাগুলো
বলতে বলতে আন্টি কাদতে
লাগলেন...
আর আমরা নির্বাক মাথা নিচু করে
বসে ছিলাম আন্টির সামনে....
মনে হলো কেউ একজন আন্টির
পেছনে দাড়ানো। মাথা তুলতেই
দেখি "রবি"! তারমানে,
এতোক্ষনের সব কথা ও শুনে
ফেলেছে।
আমার কণ্ঠ ধরে আসছিল। এবং মনে
হহচ্ছিল যেন কেউ আমার গলা টিপে
ধরেছে। শুধু আমি আরিফের কাপা
কণ্ঠে শুনতে পেলাম, আরে হিরো! তুই
এখানে এলি কেন? আমরাই তো তোর
রুমে আসছিলাম....
(সমাপ্ত)
লিখা : তালুকদার জহির
বিষয়: বিবিধ
৮৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন